top of page

ফ্যাসিবাদের ১৪ লক্ষণ

  • Writer: Anupam Deb Kanunjna
    Anupam Deb Kanunjna
  • Nov 18, 2024
  • 6 min read

Updated: Dec 4, 2024

ফ্যাসিবাদ শব্দটি ইদানিং বেশ জনপ্রিয় এবং ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে। ইদানিং সবাই একে অপরকে ফ্যাসিবাদি বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

AI generated photo of ultra nationalists rallying with flags
ফ্যাসিবাদের ১৪টি সাধারণ লক্ষণ

কেউ বলছেন বামপন্থিরা ফ্যাসিবাদি, কেউ বলছেন ইসলামিস্টরা ফ্যাসিবাদি, কেউ ‘এক ফ্যাসিবাদিকে সরিয়ে অন্য ফ্যাসিবাদিকে আনতে চাই না’ বলে বিএনপিকেও আকারে ইঙ্গিতে ফ্যাসিবাদি বলে দিচ্ছেন। কিন্তু আসলে ফ্যাসিবাদ বলতে কী বোঝায়, কী কী লক্ষণ থাকে ফ্যাসিবাদের, এ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কোনো ধারণা নেই।


স্বৈরাচার, কর্তৃত্ববাদ ইত্যাদি থেকে ফ্যাসিবাদ কিভাবে আলাদা? ফ্যাসিবাদের অনেক লক্ষণ আমার-আপনার মধ্যেও থাকতে পারে। এমনকি ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করা কোনো গোষ্ঠীর মধ্যেও থাকতে পারে সুপ্ত ফ্যাসিবাদ। কী কী লক্ষণ থাকলে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল বা সংগঠনকে ফ্যাসিবাদে আক্রান্ত বলে ধারণা করা যায়?


রাজনীতি বিজ্ঞানী ড. লরেন্স ব্রিট বেশ কিছু ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এই সবগুলোতে কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ চিহ্নিত করেছেন। তার চালানো গবেষণায় ছিল জার্মানির হিটলার, ইটালির মুসোলিনি, স্পেনের ফ্রাংকো, ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো এবং চিলির পিনোশেটের শাসনামল।


পড়ুন ফ্যাসিবাদের ১৪টি সাধারণ লক্ষণ। লক্ষণগুলো ড. লরেন্সের গবেষণায় পাওয়া, উদাহরণগুলো আমার লেখা।


১. শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর জাতীয়তাবাদ


ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে জাতীয়তাবাদ উগ্র রূপ ধারণ করে। নানা জাতীয়তাবাদী স্লোগান, মোটো, প্রতীক, গান, এবং অন্যান্য জাতীয়তাবাদী প্রোপাগান্ডা শাসকদের প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ মদদে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়।


উদাহরণ: হিটলারের নাৎসিবাদের প্রতীক স্বস্তিকা, মুসোলিনির ফ্যাসিবাদের প্রতীক ফাসি ইত্যাদি।

রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন আয়োজনে পতাকার (এমনকি পোশাকেও) মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়।


হিটলার ও মুসোলিনির শাসনামলেও ফ্যাসিবাদি প্রতীক পতাকায় স্থান পেয়েছিল। এমনকি অলিম্পিকেও উত্তোলন করা হয়েছিল নাৎসি পতাকা।


২. মানবাধিকারের স্বীকৃতি দিতে অনীহা, বিচারহীনতাকে সমর্থন


‘শত্রুর ভয়’ এবং ‘নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা’ উল্লেখ করে জনগণকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখা হয়। এর মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়, যাতে জনগণও ‘প্রয়োজন বিবেচনায় মানবাধিকারের আপাতত লঙ্ঘন’ মেনে নেয়। এসব ক্ষেত্রে জনগণেরও একটি অংশ নির্যাতন, হামলা, বিচার ছাড়া হত্যা, কারাগারে নির্যাতনকেও সমর্থন শুরু করে।


উদাহরণ: জার্মানির নাৎসি এবং ইটালির ফ্যাসিস্টদের মূল ‘জুজুর ভয়’ ছিল কমিউনিস্টদের নিয়ে। জনগণের সামনে কমিউনিস্টদের এত ভয়ঙ্কর রূপে তুলে ধরা হতো যে কমিউনিস্টদের ঠেকাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেও প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা করে তোলা সম্ভব হয়েছিল।


৩. জাতীয় ঐক্যে ‘শত্রুর সন্ধান’


জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে শত্রুপক্ষকে বড় করে হাজির করা হয়। শত্রু দমনের নামে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে ব্যস্ত রাখা হয়। অনেকক্ষেত্রে নিজেদের সুবিধার্থে কাল্পনিক শত্রু তৈরিও করে শাসকগোষ্ঠী। এই শত্রু কেবল দেশের বাইরে নয়, ভেতরেও হতে পারে। জাতি, বর্ণ বা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, উদারপন্থি, কমিউনিস্ট, সোশ্যালিস্ট, জঙ্গিসহ নানা ধরনের শত্রুকে এমন কাজে ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে।


উদাহরণ: হিটলারের নাৎসি শাসনামলে ইহুদিদের এভাবে মানবতার শত্রুতে পরিণত করা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল যে ইহুদিদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্চুর থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ইউরোপজুড়ে ৬০ লাখ ইহুদিকে নির্মমভাবে হত্যা করাও সম্ভব হয়েছিল।


৪. সেনাবাহিনীর আধিপত্য


দেশের অভ্যন্তরে নানা ধরনের সংকট থাকলেও সেনাবাহিনীকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অতিরিক্ত অর্থায়ন করা হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতি না থাকলেও প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে সারাক্ষণ যুদ্ধের দামামা বাজানো হয়। দেশের নানা সমস্যার সমাধানের না করে অন্য সকল কিছুর চেয়ে সেনাবাহিনী ও সেনাসদস্যদের বেশি দেশপ্রেমিক এবং মহত্বপূর্ণ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়।


উদাহরণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানি যখন ভয়াবহ আর্থিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো, তখন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বদলে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, পোশাক ও অস্ত্র আধুনিকায়নে বেশি অর্থ খরচ করা হয়। নাৎসি সেনাবাহিনীকে জার্মান ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। একই পরিস্থিতি ছিল মুসোলিনির ইটালিতেও।


৫. যৌনবাদের ব্যাপকতা


অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফ্যাসিবাদী সরকার, সংগঠন না প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব পুরুষদের হাতেই থাকে। নারীদের অংশগ্রহণ একেবারেই সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়। ফ্যাসিস্ট শাসনের অধীনে নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা কাজ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। (যেমন, নারীরা করবে ঘরে থেকে রান্নাবান্না, সন্তান পালন এবং পুরুষেরা কাজ করবে অফিস-আদালতে)


এই ধরনের শাসনের অধীনে গর্ভপাতের বিরুদ্ধতা থাকে সবচেয়ে বেশি। সমকাম বিদ্বেষ এবং সমকামিতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ বিদ্বেষ জাতীয় নীতিতে রূপ নেয়।


উদাহরণ: হিটলারের অধীনে নাৎসিরা যে আদর্শ জার্মান সমাজের চিত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল, সেখানে নারীদের বাইরে কাজের চেয়ে সন্তান উৎপাদন ও লালনপালনকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। নারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় নিরুৎসাহিত করতে শিক্ষানীতি পরিবর্তন করা হয়।


৬. নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম


কখনও কখনও ফ্যাসিস্ট সরকার সরাসরি গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আবার কখনও নানা নিয়মনীতি তৈরি করে গণমাধ্যমকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের প্রোপাগান্ডা নিপুণভাবে ছড়িয়ে দিতে সরকারের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয়া ব্যক্তিদের গণমাধ্যমের মালিক, সম্পাদক বা কর্মী হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। কখনও সংবাদ সেন্সর করা হয়, কখনও গণমাধ্যম নিজেরাই নানাভাবে সংবাদ সেন্সর (সেল্ফ সেন্সর) করে।


উদাহরণ: হিটলার ক্ষমতায় আসার সময় মাত্র তিন শতাংশ সংবাদমাধ্যম ছিল নাৎসিদের নিয়ন্ত্রণে। ক্ষমতায় এসেই নানা সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে, সংবাদমাধ্যমের মালিকানা ও কর্মী পরিবর্তন করে এমনকি ‘অপছন্দের’ সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের গ্রেপ্তার করে সব গণমাধ্যমকে দ্রুতই নাৎসিকরণ করা হয়।


৭. জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি


৩ নাম্বারের সঙ্গে এর অনেকটাই মিল রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে অভ্যন্তরের শত্রুর পরিবর্তে জাতীয় শত্রু খোঁজা হয় দেশের বাইরে। সারাক্ষণই জনগণকে বোঝানো হয় যে, কোনো বহিঃশত্রু দেশকে দখল বা আক্রমণ করার ষড়যন্ত্র করছে।


উদাহরণ: সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিশ্বের প্রথম কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। আর এই কমিউনিস্টদেরই জাতীয় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন হিটলার এবং তার নাৎসি সরকারে। হিটলারের প্রপাগান্ডার অন্যতম বক্তব্য ছিল যে কমিউনিস্টরা জার্মান জাতি ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক পর্যায়ে নাৎসি জার্মানি এবং কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে পারস্পরিক অনাক্রমন্যতা চুক্তি (মলোটভ-ব়্যাবেনট্রপ চুক্তি) সই হয়। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই নাৎসি বাহিনী সেই চুক্তি ভঙ্গ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। গবেষকেরা মনে করেন, অন্য নানা দেশ দখলে নিলেও শুরু থেকেই হিটলারের মূল লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।


৮. ধর্ম ও রাষ্ট্রে পারস্পরিক মেলবন্ধন


ফ্যাসিস্ট শক্তি ধর্মকে নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতা হাসিলে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেশের সংখ্যাগুরুর ধর্মকে ব্যবহার করা হয় জনগণের মতামত নিজেদের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতে। ফ্যাসিস্ট নেতা ও শাসকেরা নিজেদের সব বক্তব্যে ধর্মীয় নানা শব্দ ও বাণী ঘনঘন ব্যবহার করতে শুরু করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে ধর্মীয় সংগঠনের বিরোধ থাকলেও ধর্মকেই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়।


উদাহরণ: জার্মানিতে ১৯৩৩ সালে নাৎসিরা ক্ষমতায় আসার সময় বেশিরভাগ গির্জাই (ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট) তাদের সদস্যদের নাৎসি বাহিনীতে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করতো। গির্জার সঙ্গে বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে ১৯৩৫ সালে অভিযান চালিয়ে ‘রাষ্ট্রবিরুদ্ধ’ কাজের অভিযোগে সাত শতাধিক যাজককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জার্মান জাতি, আর্য জাতীয়তা মিলিয়ে মিশিয়ে গির্জাগুলোকেও চুপ করিয়ে দেয়া হয় বা পক্ষে নিয়ে আসা হয়।


‘জার্মান খ্রিস্টান’ নামে একটি ‘বিশুদ্ধ’ ধর্ম ও জাতীয়তার প্রতীক তৈরির চেষ্টা করা হয়।


৯. করপোরেট শক্তিকে সুরক্ষা দেয়া হয়


অভিজাত শিল্প ও বণিক সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়া হয়। তাদের নানা ছোটবড় অপরাধও উপেক্ষা করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই অভিজাতরাই ফ্যাসিবাদি শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করেন। করপোরেট ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে একটি পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।


উদাহরণ: হিটলারের শাসনামলে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি না ঘটলেও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। জার্মান প্রতিষ্ঠান ভক্সওয়াগন, বিএমডাব্লিউ, আউডি, কমার্স ব্যাংক, ডয়চে ব্যাংক, লুফৎহানসা থেকে শুরু করে নানা প্রতিষ্ঠানই হিটলার ও নাৎসিদের গণহত্যায় পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, জেনারেল মোটরসের মতো আন্তর্জাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানও নাৎসিদের কাছ থেকে সুযোগ নিয়েছে, বদলে সহায়তা করেছে।


১০. শ্রমিকদের শক্তিকে দমন করা হয়


ফ্যাসিবাদকে সত্যিকারের হুমকির মুখে ফেলতে পারে শ্রমিকদের সাংগঠনিক শক্তি। এ কারণে শ্রমিকদের অধিকারকে নানাভাবে দমন করা হয়। শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়, অথবা কঠোরভাবে দমন করা হয়।


উদাহরণ: ১৯৩৩ সালে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি পার্টি জার্মানির ক্ষমতায় আসার আগে জার্মানির মুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ছিল বিশ্বে সর্ববৃহৎ। সেবছরই পয়লা মে মে দিবস পালনের পরদিনই দেশজুড়ে স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে নাৎসি গুন্ডাদের দিয়ে জার্মানি জুড়ে ট্রেড ইউনিয়ন অফিস ও শ্রমিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলার মাধ্যমে ভীতি ছড়ানো হয়। ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।


এক পর্যায়ে শ্রমিকদের বাধ্য করা হয় নাৎসি দলের শ্রমিক সংগঠন জার্মান লেবার ফ্রন্টে (ডিএএফ) যোগ দিতে।


১১. বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকলাপ এবং শিল্পকর্মকে অবজ্ঞা


ফ্যাসিস্ট শক্তি আধুনিক শিক্ষা এবং অ্যাকাডেমিয়ার প্রতি অবজ্ঞা এবং বিরুদ্ধতাকে প্রত্যক্ষভাবে উসকে দেয়। শিক্ষাবিদ এবং অন্যান্য অ্যাকাডেমিশিয়ানদের বক্তব্যকে বিশেষভাবে দমন করা হয়। শিল্পে স্বাধীন মনোভাবকে আক্রমণ করা হয় এবং অনেকক্ষেত্রে শিল্পে সহায়তাও বাতিল করা হয়।


উদাহরণ: হিটলারের শাসনামলে আধুনিক শিল্পকর্মকে মনে করা হতো ‘ইহুদিদের দ্বারা কলুষিত’ এবং সে কারণে চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ‘জার্মান স্পিরিটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’, এমন অভিযোগে নানা শিল্পকর্ম নিষিদ্ধও করা হয়।


১২. অপরাধ ও শাস্তি নিয়ে আচ্ছন্ন থাকা


ফ্যাসিস্ট শক্তি আইন প্রতিষ্ঠার নামে কোনো বাহিনীকে সীমাহীন ক্ষমতা প্রদান করে। জনগণও অনেকক্ষেত্রে শাস্তি, বিচারের নামে নামে সেই বাহিনীর নানা নির্যাতন ও হয়রানিকে দেখেও না দেখার ভান করে। ফ্যাসিস্ট শাসক ক্ষমতায় থাকলে সাধারণত জাতীয় পুলিশ বাহিনী বা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই দায়িত্ব পালন করে। অনেকক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসার আগে ফ্যাসিস্ট শক্তির নিজেদের সুগঠিত বাহিনী থাকে।


উদাহরণ: জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি পার্টি এবং ইটালিতে মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট পার্টি ক্ষমতায় এসে জাতীয় পুলিশ বাহিনীকে কাজে লাগায়। কিন্তু ক্ষমতায় আসার আগেও নাৎসি পার্টির স্টুর্মআবটাইলুং এবং ফ্যাসিস্ট পার্টির সশস্ত্র বাহিনী ব্ল্যাক শার্টস নিয়মিতই তাণ্ডব চালাতো।


১৩. স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি


ফ্যাসিস্ট শাসকেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেন এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাদের যাতে জবাবদিহিতা না করতে হয় সেটা নিশ্চিত করেন। অধিকাংশ ফ্যাসিস্ট শাসনেই দেখা গেছে, নেতা ও তাদের আশেপাশের মানুষ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করেন।


উদাহরণ: নাৎসি শাসনামলে উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা নিয়মিতই ঘুস হিসাবে অর্থ, সম্পত্তি এবং কর মওকুফ পেতেন। এর বিনিময়ে নাৎসিবাদের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করতে হতো। এই পদ্ধতিরে রীতিমতো কাঠামোহত রূপ দেয়া হয়েছিল।


১৪. প্রতারণামূলক নির্বাচন


ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হয় নামেমাত্র। প্রতিপক্ষের নামে ব্যক্তিগত কালিমালেপন, হামলা-মামলা, হত্যা-গুম, আসন পুনর্বিন্যাস, গণমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা, ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করে নির্বাচনকে নিজের পক্ষে নিয়ে নেয়া হয়। নিজেদের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করে এবং বৈধ প্রমাণে বিচার বিভাগকেও কাজে লাগানো হয়।


উদাহরণ: ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে নাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর মার্চে ফেডারেল নির্বাচন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এটিই ছিল জার্মানির সবশেষ বহুদলীয় নির্বাচন। ১৯৩৩ ফেডারেল নির্বাচনের আগে কমিউনিস্ট পার্টি, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট এবং সেন্টার পার্টির বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান শুরু হয়। নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি ৮১টি আসন পেলেও তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। এনেবলিং অ্যাক্ট পাস করে প্রায় একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়।


এরপর ১৯৩৩ সালের নভেম্বর, ১৯৩৬ এবং ১৯৩৮ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বহুদলীয় প্রার্থীদের বদলে নাৎসিদের দেয়া প্রার্থী তালিকার ওপর হ্যাঁ-না ভোট হয়। প্রতিটিতেই ৯০ শতাংশের বেশি ভোটার নাৎসিদের সমর্থন করেন। না ভোট দিলে জুলুম, হয়রানি এমনকি প্রাণ হারানোর ঝুঁকি ছিল, এমন ভয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে নাৎসি প্রার্থী তালিকায় হ্যাঁ ভোট দিতেন।


Comments


bottom of page